অমিতাভ দাশ হিমুন, গাইবান্ধা:
“বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে গাইবান্ধা ডট নিউজ এর বিশেষ আয়োজন ডিসেম্বর মাসজুড়ে প্রতিদিন একটি করে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গাইবান্ধার নানা ঘটনার স্মৃতিচারন - হৃদয়ে একাত্তর”
৫ ফুট সাড়ে ১১ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষ ওয়াসিকার মো. ইকবাল মাজু কিশোর বয়স থেকে ছিলেন অন্যরকম। ছোট ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে দিনরাত মেতে থাকতেন। পরিবারের ৫ ভাই ৫ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় এই স্বল্পভাষী ছেলেটিকে নিয়ে বাবা আব্দুর রশিদ মিয়া আর মা মরিয়ম খাতুন একটু বেশি ভাবতেন। কিন্তু তারা জানতেন না একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে তাদের সদ্য কলেজে যাওয়া ছেলেটি জন্মভূমি আর মানুষকে ভালোবেসে খুব গোপনে প্রতিবাদী মিছিল আর সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছেন।
শহরের পূর্বপাড়ায় তার বাড়ী। সেখানে টেলিফোন একচেঞ্জের পাশে সন্ধ্যার পর অগ্রজপ্রতিম নজরুল (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) রনাঙ্গগণের বন্ধু শাহজাদা, সেনা সদস্য টুকু, জিন্নু, ইমাম, কামু আর মোস্তার সাথে তার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যত গোপন আলাপচারিতা। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স উদ্যানে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর সবার কাছে মাজুর ভূমিকা স্পষ্ট হলো। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা তরুণদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহনে আহ্বান জানালেন। বন্ধুদের সাথে মাজুও গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন। একদিন প্যারেড করার সময় পাশে একজনকে দেখে মাজু চমকে ওঠেন। তিনিও প্যারেড করছিলেন। সন্ধ্যের আবছা আলোয় প্রথমে চিনতে না পারলেও প্যারেড শেষে লোকটি মাথায় হাত রাখতেই মাজু আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি আর কেউ নন, তার বাবা আবদুর রশিদ। বাবা বলেছিলেন, আমিও আছি তোরসাথে । বাপ বেটা এক সাথে লড়াই করব। এ ছিল এক অন্য ধরণের অনুপ্রেরণা।
তবে মাজু এইটুকুতে খুশি ছিলেন না। তাই অন্যরা বাড়ি ফিরলেও সন্ধ্যার পর স্থানীয় ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠের অস্ত্র ও যুদ্ধ প্রশিক্ষণ আর রাত ১২ টার পর অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্যদের দেয়া খুব গোপনে কঠিন প্রশিক্ষণ নিতেও তিনি ছুটতেন। প্রশিক্ষণের সময় কাপড় ও খড়ের পাকিস্তানী সেনার উপর বেয়নেট চার্জ করার সময় তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরতো। তিনি বললেন, পাকিস্তানীদের হত্যাকান্ডের খবর শুনে তখন আমি স্বপ্নেও তাদের শত্রু ভেবে যুদ্ধ করতাম।
১৭ এপ্রিল ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনী গাইবান্ধায় ঢুকে পড়ে। তাদের একটি দল পূর্বপাড়ায় মাজু আর তার বন্ধুদের খোঁজে সাঁজোয়া গাড়ী নিয়ে গেলে সেখানে থাকা নিরাপদ নয় বুঝতে পেরে বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে ভারতের পথে রওনা হন তারা। সেদিন পাকিস্তানীদের গুলিতে শহীদ হন স্থানীয় তিনজন নিরীহ মানুষ। মাজু ও তার বন্ধুরা যাওয়ার পথে কুড়িয়ে পান আনসার সদস্যদের ফেলে যাওয়া চারটি রাইফেল আর গুলি। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় গিয়ে দেখা হয় অনেকের সাথে। রসুলপুর ঘাট থেকে যাত্রা শুরু হয় নৌকোয়। শহরের দুটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার তাদের সহযাত্রী হন। কামারজানী বন্দরের কাছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সালু (পরবর্তীতে কুখ্যাত রাজাকার) তাদের পথরোধ করে হিন্দু পরিবারটিকে নামিয়ে নিতে চাইলে প্রথমবারের মত অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন মাজু। রক্ষা করেন পরিবার দু’টিকে। তারপর আবার যাত্রা। গন্তব্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাইনকার চর। তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজ তেমন ভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু মাজুর মাথায় তখন শত্রু হননের নেশা চেপে বসেছে। বন্ধুদের নিয়ে একরাতে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই সামান্য অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে বসলেন রৌমারী থানা। কিন্তু অবাঙ্গালী পুলিশ বিপুল অস্ত্রশ^স্ত্রে সজ্জিত থাকায় বিফল হলো সেই আক্রমণ। তিন সহযোদ্ধা ধরাও পড়লেন। ফিরে এসে বিএসএফ ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তার কাছে পরিস্থিতি জানালে তারা সাহায্য করতে রাজি হলেন। পরের রাতে বিএসএফ এর কাছ থেকে অস্ত্র সাহায্য নিয়ে আবারও আক্রমণ করে উদ্ধার করলেন বন্ধুদের। আটক ১২ পুলিশ কর্মকর্তা সদস্যকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করলেন তারা।
এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং নিতে প্রথমে বড়াইবাড়ি, কাঁকরি পাড়া ইউথ ক্যাম্প এবং পরবর্তীতে উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২১৩ জন দলের সাথে মাজুও গেলেন তুরায়। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে এক মাসের কঠিন প্রশিক্ষণ। তখন কোম্পানীগুলো কেবল গঠিত হচ্ছিল। গাইবান্ধার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কোম্পানীর সাথে জুনিয়র লিডার হিসেবে যুক্ত হলেন ওয়াসিকার ইকবাল মো. মাজু। কিন্তু অস্ত্র গোলাবারুদ বা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল শিখে মন ভরছিল না তার। তিনি আবেদন করলেন বিষ্ফোরক দ্রব্যের ট্রেনিং করতে চান। তার আবেদনে সাড়া দিলেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছোটবেলা থেকেই যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয়ের ব্যাপারটি এবার কাজে লাগলো। এক মাসের ট্রেনিং এ দ্রুত শিখে ফেললেন ব্রীজ, ভবন, ট্যাংক ওড়াবার কৌশল। পুরোপুরি এক্সপ্লোসিভ বিশেষজ্ঞ হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন মাজু। রঞ্জু কোম্পানী ১১ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে নাামে। এই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন কর্ণেল তাহের ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হামিদুল্লা খান। এরপর গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকারদের সাথে একের পর এক যুদ্ধ করার পাশাপাশি মাজু ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মুল ভূমিকা রেখে হানাদারদের কাছে ত্রাসে পরিনত হন।
ওয়াসিকার মো. ইকবাল মাজু জানালেন ট্রেনিংএর পর থেকে প্রতিদিন যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে। ফুলছড়ির কালাসোনার চরে ছিল রঞ্জু কোম্পানীর ক্যাম্প। প্রায়ই ব্রহ্মপুত্রের ওপার থেকে চালান হতো ভারি অস্ত্রের আক্রমন। হেলিকপ্টার গানশিপ আর যুদ্ধ বিমান বোমা ফেলত। শত্রুদের গানবোট আক্রমন চালাতো। তারাও সমান তালে পাল্টা উত্তর দিতেন। তবে প্রথম ভয়াবহ যুদ্ধের কথা তার এখনও মনে পড়লে তার শরীরে শিহরণ জাগে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী সড়ক সেতু কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সেটি তিন বারের চেষ্টায় উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়। তবে এই সেতু উড়াতে গিয়ে তাদের জড়িয়ে পড়তে হয় সম্মুখ সমরে। জুন মাসে কোম্পানী কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নির্দেশনায় রিজার্ভ ক্যাম্প থেকে ৩৩ জন রওনা হন নৌপথে। উড়িয়ার আতিক উল্যা চেয়ারম্যানের বাড়ীতে গভির রাতে আশ্রয় নেন তারা। পরদিন দুপুরে এলাকার লোকজন জানান স্থানীয় নৌঘাটে পাকিস্তানীদের সহযোগি মুজাহিদ বাহিনী ৬০ জন সদস্য লুটপাট ও নির্যাতন শুরু করেছে। তিনদিক থেকে আক্রমণ করে যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ৫২জন মুজাহিদ কে অস্ত্র সহ ধরে ফেলে। তাদের বেধে রিজার্ভ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মুল সমস্যাটি শুরু হয় পরদিন। মুজাহিদদের এই পরিনতির খবর পেয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও বিপুল সংখ্যক রাজাকার সকাল হতে না হতেই উড়িয়া গ্রামের দিকে আসতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা চরের মধ্যে অবস্থান নেন। কিন্তু পাকিস্তানীরা বাধের উপরে থাকায় তাদের উপর আক্রমণ করা সম্ভব হয়নি। বিনা বাধায় উড়িয়া গ্রামে ঢুকে পড়ে দুঘন্টা ধরে লুটপাট, হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ অগ্নি সংযোগ করে পাকিস্তানীরা। নারীদের আর্ত চিৎকারে মাজুর মনে প্রতিশোধের আগুন জলে ওঠে। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে হাতে হাত রেখে শপথ করেন আজ হয় পাকিস্তানীরা মরবে না হলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে জীবন বিসর্জন দেবে। জমির আইল দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী ও সহযোগিরা নৌকা ও গানবোটে ওঠার জন্য আসছিল। পজিশনের দিক থেকে মাজুরা অনেকটাই খারাপ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে নিজেদের কাভার ও নিরাপত্তার কথা ভুলে পাকিস্তানীরা নৌকায় ওঠার সাথেই গ্রেনেড, রাইফেল ও এলএমজি দিয়ে মুখোমুখি আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিরোধের চেষ্টা করেও আচমকা গুলির মুখে পাকিস্তানীরা নদীতে পড়ে যেতে শুরু করে। চোখের সামনে পাকিস্তানীদের খুন ধর্ষন দেখে এ সময় মাজু ছিলেন ক্ষোভে দু:খে দিশাহারা। তিনি নিজের বিপদের কথা না ভেবে পয়েন্ট ব্লাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করেন পাকিস্তানী সেনা। সেদিন সন্ধ্যায় পাশের একটি চরে লাশ ভেসে উঠলে দেখা যায় ২৪ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধের পর ধর্ষিত অসহায় নারীদের কান্না দেখে আর মানুষের লাশের পাশে বসে ওয়াশিকার ইকবাল মো. মাজু এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানীদের নিশ্চিহ্ন করবেন।
এর মধ্যে কেটে যায় আরও কিছুদিন। মাজু অংশ নেন ছোট বড় ত্রিশটি যুদ্ধে। ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মাজুর দক্ষতা ততদিনে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় শিবিরেও। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তাকে ক্যাম্পে ডেকে নেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর বিন্দ্রে সিং ও ক্যাপটেন রামানাথ। তারা বলেন, গাইবান্ধা শহরের সাথে সুন্দরগঞ্জ থানার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। এ জন্য যোগাযোগ সড়কের ওপর দারিয়াপুর সেতু ধ্বংস করা প্রয়োজন। মাজুকে এক্ষেত্রে মুল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মাজু সম্মতি জানিয়ে ফিরে আসেন। কোম্পানী কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর শবেবরাতের রাতে ওই আক্রমণ চালানো হয়। আগের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ১৩০ জনের একটি দল সহ মাজু এসে আশ্রয় নেন পাশের কামারজানীর চেংমারী স্কুলে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পরবর্তীতে সরে যান একটি জেলে পাড়ায়। শবেবরাতের দিন সন্ধ্যায় কামারজানী ঘাট থেকে ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে ঢুকে দারিয়াপুর ব্রীজে সেখান অবস্থারত রাজাকার, রেঞ্জার ও পুলিশদের ওপর তিনদিক থেকে আক্রমণ শুরু করেন তারা। আক্রমণের মুখে কিছুক্ষণ পাল্টা উত্তর দিলেও এক সময় পিছু হটে রাজাকাররা। মাজু পুরু কংক্রিটের ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেন। নিয়ম অনুযায়ী এক্সপ্লোসিভ বসাতে বসাতে মধ্যরাত। সহযোগি মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলে ডেটোনেটর লাগিয়ে তার নিয়ে (কর্টেক্স লাইন) সরে যান ২০০ ফিট দূরে। ফিউজ ম্যাচ দিয়ে অগ্নি সংযোগ করার পর ৫ সেকেন্ডের মধ্যে আলোর ঝলকানিতে ছেয়ে যায় আকাশ। ব্রীজ ধ্বসে পরে নদীর বুকে। মুক্তিযোদ্ধাদের জয়বাংলা শ্লোগানে কেপে ওঠে আকাশ বাতাস। মাজু ভুলে যান বিষ্ফোরণে তাপে তার মুখম-ল পুড়ে কালো হয়ে গেছে।
উজ্জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাতেই আরএকটু সামনে মাঠের হাট ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। ওই ব্রীজের পাশেই সুন্দরগঞ্জের মন্ডলের হাট ছাপরহাটী রাজাকার ক্যাম্প। সেখানে বিপুল সংখ্যক রাজাকার অবস্থান করে ব্রীজ পাহারা দেয়। বিনা বাধায় নদীর পাড় দিয়ে ব্রীজের কাছে পৌছলেও রাজাকাররা সামনে ও পেছন থেকে আক্রমণ করে। তাদের মধ্যে ঠাকুগাঁওয়ের ১২জন আহতসহ ষাটজন মুলদল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে ভেসে যায় ব্রীজ ও সংলগ্ন এলাকা। গুরুতর আহত হন মাজুর ঘনিষ্ট বান্ধব অসীম সাহসী রাজা। ভোরের আলো ফোটায় মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান মন্ডলের হাট। রাজাকে কাঁধে তুলে নেন মাজু। সেখানে রাজেন বর্মন নামে এক ব্যক্তির বিশাল বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেন তারা। দিনের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই পাকিস্তানীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে তল্লাসি শুরু করে। রাজাকাররা গ্রামে ঢুকে যুদ্ধ জয়ের উৎসব করছিল। বারবার মাইকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে আহবান জানান হচ্ছিল । মাজু মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে জানান, পাকিস্তানীরা তাদের সন্ধান পেলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করা হবে। কিন্তু কোন ভাবেই জীবিত তাদের হাতে ধরা দেয়া যাবে না। সেই কারণে বাঁশঝাড়ের চারপাশে তিনি মাইন ও অন্যান্য এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে দিচ্ছেন। তারপর শুরু হয় প্রতিক্ষা। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও মাজু সকলকে অস্ত্র হাতে তৈরী থাকার আহবান জানান। তিনি শেষ গুলিটি নিজের জন্য তুলে রাখার কথা বলেন। কি এক অজ্ঞাত কারণে একেবারে কাছে এসেও ফিরে যায় পাক সেনাদের ট্রাক। সন্ধ্যার দিকে গ্রামবাসীরা তাদের জানান পাকিরা সুন্দরগঞ্জের দিতে সরে গেছে। ঠিক সেই সময় আকাশ ভেঙ্গে নামে বৃষ্টি। আহত নিস্তেজ রাজাকে কাঁধে নিয়ে বিলের গলাপানি ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা দুঘন্টা হেঁটে সরে যান নিরাপদ আশ্রয়ে।
এরপর ডিসেম্বর মাসে ব্রহ্মপুত্রের কালাসোনার চরে রঞ্জু কোম্পানীর ক্যাম্পে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। সেখান থেকে গাইবান্ধার চারপাশে প্রায় প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। ফলিয়া, হাতিয়া, অনন্তপুর, ঘুঘুমারি, নদীতে পাকিস্তানী অস্ত্র ও সৈন্যবাহী জাহাজে আক্রমনের সাথে রঞ্জু কোম্পানীর অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ওয়াশিকার মো.ইকবাল মাজু প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। পাকিস্তানী যুদ্ধবিমান ওই চরগুলোতে বোমা ফেলতো। বাংকার থেকে মাজু ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি থেকে বিমান লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তেন। মাজু জানান, গুলি, বোমার শব্দ তখন এতটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল যে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কখনও কখনও প্রকাশ্যে বালুচরে দাড়িয়েও বিমান লক্ষ্য করে গুলি করেছি। শত্রুবিমান নাক ঘোরাতেই ঝাপিয়ে বাংকারে আশ্রয় নিতাম।
তার গর্ব, যুদ্ধ করতে করতেই তিনি ও তার সহযোদ্ধারা ৭ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত করে গাইবান্ধার মাটিতে পা রাখেন। ৫ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের উপকন্ঠে ফলিয়া ব্রীজে পাকিদের সাথে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। হাতাহাতি যুদ্ধে ২১ রাজাকারকে আহত অবস্থায় বন্দি করেন। তাদের আক্রমনের মুখে হানাদার ও রাজাকাররা শহর ছেড়ে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।
অর্থবিত্ত নয়, দেশের মাটিকে ভালবেসেই তিনি একাত্তরে জীবনবাজী রেখেছিলেন। তার সন্তান মেধা, মুকুট ও উৎসও অর্থ চায় না । চায় বাবার বীরত্বের স্বীকৃতি । মাঝে মাঝে মাজুরও মনে হয়, ওদের জন্য রাষ্ট্রের দেয়া কোন বিশেষ স্বীকৃতি তিনি যদি রেখে যেতে পারতেন! তবে তিনি খুশি জাতির জনকের কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায় করেছেন। তার কামনা, রক্তে কেনা এই দেশ যেন কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে পরিচালিত না হয়।
- অমিতাভ দাশ হিমুন, সাংবাদিক ও বাচিক শিল্পী
কেআরআর/জিএআই
সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়
জেলার খবর
জনপদ |
সভা
মতবিনিময় |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
জনপদ |
সভা
মতবিনিময় সভা |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শ্রদ্ধাঞ্জলি
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস পালিত
জেলার খবর
জনপদ |
আলোচনা সভা
বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস পালিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
আলোচনা সভা
বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত
জেলার খবর
জনপদ |
আলোচনা সভা
প্রতিবন্ধী দিবস |
গাইবান্ধা
পলাশবাড়ীতে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮০তম জন্মবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
রাজনীতি |
জন্মবার্ষিকী
ফজলুল হক মনি |
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে যুববলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জন্মবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
রাজনীতি |
জন্মবার্ষিকী
ফজলুল হক মনি |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে নারী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
ক্রীড়া-বিনোদন |
প্রতিযোগিতা
নারী ফুটবল |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে আলোচিত রাসেল হত্যাকাণ্ডের আসামি যুবলীগ নেতা সৈয়ব আলী গ্রেফতার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
গ্রেফতার
রাসেল হত্যা |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
পলাশবাড়ীতে সড়ক দূর্ঘটনায় রংপুর বেতার শিল্পী নিহত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনা |
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় স্বাস্থ্য বিভাগীয় সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের প্রতিবাদ সভা
জেলার খবর
জনপদ |
প্রতিবাদ সভা
সিএইচসিপি এসোসিয়েশন |
গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন আ.লীগ নেতা মকবুল হোসেন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মকবুল হোসেন |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সভা
পুষ্টি সমন্বয় কমিটি |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় পিকআপ মালিক সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
জনপদ |
মতবিনিময় সভা
পিকআপ মালিক সমিতি |
গাইবান্ধা
চলে গেলেন সুন্দরগঞ্জের প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মকবুল হোসেন |
সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
মেলা
বিজ্ঞান মেলা |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধার দারিয়াপুরে সোনালী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
উদ্বোধন
সোনালী ব্যাংক |
দারিয়াপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সমাবেশ
মহিলা সমাবেশ |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জের সেনপাড়ায় চলছে কুমড়ো বড়া তৈরির ধুম
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
জনজীবন
কুমুড় বড়া |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জে অযত্ম অবহেলায় ভাবমূর্তির সংকটে শহীদ মিনার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শহীদ মিনার
ভাবমূর্তির সংকট |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
এসকেএস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
|
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
এসকেএস স্কুল এ্যান্ড কলেজ |
গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে জনতার সংলাপ অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সংলাপ
জনতার সংলাপ |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা শহিদ মিনারে আলোক প্রজ্জ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জেলার খবর
জনপদ |
আলোক প্রজ্জ্বলন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান |
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় হঠাৎ বন্ধ পেট্রল পাম্প, দুর্ভোগে মানুষ
জেলার খবর
জনপদ |
দুর্ভোগ
বন্ধ পেট্রল পাম্প |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের চাবি হস্তান্তর
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
হস্তান্তর
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুকের মাতার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোক
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মালেকা বেগম |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গোবিন্দগঞ্জে গরুর খামারে অগ্নিকান্ড, ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্ঘটনা
অগ্নিকান্ড |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
১৭দফা দাবিতে গাইবান্ধায় সিপিবির পদযাত্রা, দেশের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রায় হামলার নিন্দা
জেলার খবর
রাজনীতি |
পদযাত্রা
সিপিবি |
গাইবান্ধা
রংপুর সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ পদক পেলেন গাইবান্ধার আবু জাফর সাবু
জেলার খবর
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি |
পুরস্কার-স্বীকৃতি
আবু জাফর সাবু |
গাইবান্ধা
যা বলা আছে এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
এমপি লিটন হত্যা মামলা |
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে ডিবি পুলিশের অভিযানে আট জুয়ারী আটক
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
আটক
জুয়ারী আটক |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
জনকল্যাণ
শীতবস্ত্র বিতরণ |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
কড়া নিরাপত্তা |
গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: ফাঁসির রায় শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসামীদের স্বজনরা
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা |
গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: আদালত প্রাঙ্গণে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
উৎসুক মানুষের ভিড় |
গাইবান্ধা
ঘুষ চাওয়ার অপরাধে গোবিন্দগঞ্জে এসআই ক্লোজড
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্নীতি
এসআই ক্লোজড |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে অবহিতকরণ সভা
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সভা
অবহিতকরণ সভা |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে শিবির নেতা গ্রেফতার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
গ্রেফতার
শিবির নেতা গ্রেফতার |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
দু’বছর যাবৎ স্থবির গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সকল কার্যক্রম, উন্নয়ন ব্যাহত
জেলার খবর
জনপদ |
দুর্ভোগ
উন্নয়ন ব্যাহত |
গাইবান্ধা
রংপুর জেলা ও মহানগর আ'লীগে সাবেক নেতৃত্ব পুনর্বহাল
বিভাগীয় খবর
রাজনীতি |
কাউন্সিল
আওয়ামী লীগ |
রংপুর
মালিতে দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১৩ ফরাসি সেনা নিহত
আন্তর্জাতিক খবর
জনপদ |
দুর্ঘটনা
দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ |
মালি, আফ্রিকা
অমিতাভ দাশ হিমুন, গাইবান্ধা:
“বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে গাইবান্ধা ডট নিউজ এর বিশেষ আয়োজন ডিসেম্বর মাসজুড়ে প্রতিদিন একটি করে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গাইবান্ধার নানা ঘটনার স্মৃতিচারন - হৃদয়ে একাত্তর”
৫ ফুট সাড়ে ১১ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষ ওয়াসিকার মো. ইকবাল মাজু কিশোর বয়স থেকে ছিলেন অন্যরকম। ছোট ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে দিনরাত মেতে থাকতেন। পরিবারের ৫ ভাই ৫ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় এই স্বল্পভাষী ছেলেটিকে নিয়ে বাবা আব্দুর রশিদ মিয়া আর মা মরিয়ম খাতুন একটু বেশি ভাবতেন। কিন্তু তারা জানতেন না একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে তাদের সদ্য কলেজে যাওয়া ছেলেটি জন্মভূমি আর মানুষকে ভালোবেসে খুব গোপনে প্রতিবাদী মিছিল আর সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছেন।
শহরের পূর্বপাড়ায় তার বাড়ী। সেখানে টেলিফোন একচেঞ্জের পাশে সন্ধ্যার পর অগ্রজপ্রতিম নজরুল (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) রনাঙ্গগণের বন্ধু শাহজাদা, সেনা সদস্য টুকু, জিন্নু, ইমাম, কামু আর মোস্তার সাথে তার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যত গোপন আলাপচারিতা। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স উদ্যানে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর সবার কাছে মাজুর ভূমিকা স্পষ্ট হলো। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা তরুণদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহনে আহ্বান জানালেন। বন্ধুদের সাথে মাজুও গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন। একদিন প্যারেড করার সময় পাশে একজনকে দেখে মাজু চমকে ওঠেন। তিনিও প্যারেড করছিলেন। সন্ধ্যের আবছা আলোয় প্রথমে চিনতে না পারলেও প্যারেড শেষে লোকটি মাথায় হাত রাখতেই মাজু আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি আর কেউ নন, তার বাবা আবদুর রশিদ। বাবা বলেছিলেন, আমিও আছি তোরসাথে । বাপ বেটা এক সাথে লড়াই করব। এ ছিল এক অন্য ধরণের অনুপ্রেরণা।
তবে মাজু এইটুকুতে খুশি ছিলেন না। তাই অন্যরা বাড়ি ফিরলেও সন্ধ্যার পর স্থানীয় ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠের অস্ত্র ও যুদ্ধ প্রশিক্ষণ আর রাত ১২ টার পর অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্যদের দেয়া খুব গোপনে কঠিন প্রশিক্ষণ নিতেও তিনি ছুটতেন। প্রশিক্ষণের সময় কাপড় ও খড়ের পাকিস্তানী সেনার উপর বেয়নেট চার্জ করার সময় তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরতো। তিনি বললেন, পাকিস্তানীদের হত্যাকান্ডের খবর শুনে তখন আমি স্বপ্নেও তাদের শত্রু ভেবে যুদ্ধ করতাম।
১৭ এপ্রিল ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনী গাইবান্ধায় ঢুকে পড়ে। তাদের একটি দল পূর্বপাড়ায় মাজু আর তার বন্ধুদের খোঁজে সাঁজোয়া গাড়ী নিয়ে গেলে সেখানে থাকা নিরাপদ নয় বুঝতে পেরে বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে ভারতের পথে রওনা হন তারা। সেদিন পাকিস্তানীদের গুলিতে শহীদ হন স্থানীয় তিনজন নিরীহ মানুষ। মাজু ও তার বন্ধুরা যাওয়ার পথে কুড়িয়ে পান আনসার সদস্যদের ফেলে যাওয়া চারটি রাইফেল আর গুলি। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় গিয়ে দেখা হয় অনেকের সাথে। রসুলপুর ঘাট থেকে যাত্রা শুরু হয় নৌকোয়। শহরের দুটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার তাদের সহযাত্রী হন। কামারজানী বন্দরের কাছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সালু (পরবর্তীতে কুখ্যাত রাজাকার) তাদের পথরোধ করে হিন্দু পরিবারটিকে নামিয়ে নিতে চাইলে প্রথমবারের মত অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন মাজু। রক্ষা করেন পরিবার দু’টিকে। তারপর আবার যাত্রা। গন্তব্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাইনকার চর। তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজ তেমন ভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু মাজুর মাথায় তখন শত্রু হননের নেশা চেপে বসেছে। বন্ধুদের নিয়ে একরাতে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই সামান্য অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে বসলেন রৌমারী থানা। কিন্তু অবাঙ্গালী পুলিশ বিপুল অস্ত্রশ^স্ত্রে সজ্জিত থাকায় বিফল হলো সেই আক্রমণ। তিন সহযোদ্ধা ধরাও পড়লেন। ফিরে এসে বিএসএফ ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তার কাছে পরিস্থিতি জানালে তারা সাহায্য করতে রাজি হলেন। পরের রাতে বিএসএফ এর কাছ থেকে অস্ত্র সাহায্য নিয়ে আবারও আক্রমণ করে উদ্ধার করলেন বন্ধুদের। আটক ১২ পুলিশ কর্মকর্তা সদস্যকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করলেন তারা।
এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং নিতে প্রথমে বড়াইবাড়ি, কাঁকরি পাড়া ইউথ ক্যাম্প এবং পরবর্তীতে উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২১৩ জন দলের সাথে মাজুও গেলেন তুরায়। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে এক মাসের কঠিন প্রশিক্ষণ। তখন কোম্পানীগুলো কেবল গঠিত হচ্ছিল। গাইবান্ধার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কোম্পানীর সাথে জুনিয়র লিডার হিসেবে যুক্ত হলেন ওয়াসিকার ইকবাল মো. মাজু। কিন্তু অস্ত্র গোলাবারুদ বা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল শিখে মন ভরছিল না তার। তিনি আবেদন করলেন বিষ্ফোরক দ্রব্যের ট্রেনিং করতে চান। তার আবেদনে সাড়া দিলেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছোটবেলা থেকেই যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয়ের ব্যাপারটি এবার কাজে লাগলো। এক মাসের ট্রেনিং এ দ্রুত শিখে ফেললেন ব্রীজ, ভবন, ট্যাংক ওড়াবার কৌশল। পুরোপুরি এক্সপ্লোসিভ বিশেষজ্ঞ হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন মাজু। রঞ্জু কোম্পানী ১১ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে নাামে। এই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন কর্ণেল তাহের ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হামিদুল্লা খান। এরপর গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকারদের সাথে একের পর এক যুদ্ধ করার পাশাপাশি মাজু ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মুল ভূমিকা রেখে হানাদারদের কাছে ত্রাসে পরিনত হন।
ওয়াসিকার মো. ইকবাল মাজু জানালেন ট্রেনিংএর পর থেকে প্রতিদিন যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে। ফুলছড়ির কালাসোনার চরে ছিল রঞ্জু কোম্পানীর ক্যাম্প। প্রায়ই ব্রহ্মপুত্রের ওপার থেকে চালান হতো ভারি অস্ত্রের আক্রমন। হেলিকপ্টার গানশিপ আর যুদ্ধ বিমান বোমা ফেলত। শত্রুদের গানবোট আক্রমন চালাতো। তারাও সমান তালে পাল্টা উত্তর দিতেন। তবে প্রথম ভয়াবহ যুদ্ধের কথা তার এখনও মনে পড়লে তার শরীরে শিহরণ জাগে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী সড়ক সেতু কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সেটি তিন বারের চেষ্টায় উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়। তবে এই সেতু উড়াতে গিয়ে তাদের জড়িয়ে পড়তে হয় সম্মুখ সমরে। জুন মাসে কোম্পানী কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নির্দেশনায় রিজার্ভ ক্যাম্প থেকে ৩৩ জন রওনা হন নৌপথে। উড়িয়ার আতিক উল্যা চেয়ারম্যানের বাড়ীতে গভির রাতে আশ্রয় নেন তারা। পরদিন দুপুরে এলাকার লোকজন জানান স্থানীয় নৌঘাটে পাকিস্তানীদের সহযোগি মুজাহিদ বাহিনী ৬০ জন সদস্য লুটপাট ও নির্যাতন শুরু করেছে। তিনদিক থেকে আক্রমণ করে যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ৫২জন মুজাহিদ কে অস্ত্র সহ ধরে ফেলে। তাদের বেধে রিজার্ভ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মুল সমস্যাটি শুরু হয় পরদিন। মুজাহিদদের এই পরিনতির খবর পেয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও বিপুল সংখ্যক রাজাকার সকাল হতে না হতেই উড়িয়া গ্রামের দিকে আসতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা চরের মধ্যে অবস্থান নেন। কিন্তু পাকিস্তানীরা বাধের উপরে থাকায় তাদের উপর আক্রমণ করা সম্ভব হয়নি। বিনা বাধায় উড়িয়া গ্রামে ঢুকে পড়ে দুঘন্টা ধরে লুটপাট, হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ অগ্নি সংযোগ করে পাকিস্তানীরা। নারীদের আর্ত চিৎকারে মাজুর মনে প্রতিশোধের আগুন জলে ওঠে। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে হাতে হাত রেখে শপথ করেন আজ হয় পাকিস্তানীরা মরবে না হলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে জীবন বিসর্জন দেবে। জমির আইল দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী ও সহযোগিরা নৌকা ও গানবোটে ওঠার জন্য আসছিল। পজিশনের দিক থেকে মাজুরা অনেকটাই খারাপ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে নিজেদের কাভার ও নিরাপত্তার কথা ভুলে পাকিস্তানীরা নৌকায় ওঠার সাথেই গ্রেনেড, রাইফেল ও এলএমজি দিয়ে মুখোমুখি আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিরোধের চেষ্টা করেও আচমকা গুলির মুখে পাকিস্তানীরা নদীতে পড়ে যেতে শুরু করে। চোখের সামনে পাকিস্তানীদের খুন ধর্ষন দেখে এ সময় মাজু ছিলেন ক্ষোভে দু:খে দিশাহারা। তিনি নিজের বিপদের কথা না ভেবে পয়েন্ট ব্লাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করেন পাকিস্তানী সেনা। সেদিন সন্ধ্যায় পাশের একটি চরে লাশ ভেসে উঠলে দেখা যায় ২৪ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধের পর ধর্ষিত অসহায় নারীদের কান্না দেখে আর মানুষের লাশের পাশে বসে ওয়াশিকার ইকবাল মো. মাজু এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানীদের নিশ্চিহ্ন করবেন।
এর মধ্যে কেটে যায় আরও কিছুদিন। মাজু অংশ নেন ছোট বড় ত্রিশটি যুদ্ধে। ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মাজুর দক্ষতা ততদিনে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় শিবিরেও। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তাকে ক্যাম্পে ডেকে নেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর বিন্দ্রে সিং ও ক্যাপটেন রামানাথ। তারা বলেন, গাইবান্ধা শহরের সাথে সুন্দরগঞ্জ থানার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। এ জন্য যোগাযোগ সড়কের ওপর দারিয়াপুর সেতু ধ্বংস করা প্রয়োজন। মাজুকে এক্ষেত্রে মুল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মাজু সম্মতি জানিয়ে ফিরে আসেন। কোম্পানী কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জুর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর শবেবরাতের রাতে ওই আক্রমণ চালানো হয়। আগের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ১৩০ জনের একটি দল সহ মাজু এসে আশ্রয় নেন পাশের কামারজানীর চেংমারী স্কুলে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পরবর্তীতে সরে যান একটি জেলে পাড়ায়। শবেবরাতের দিন সন্ধ্যায় কামারজানী ঘাট থেকে ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে ঢুকে দারিয়াপুর ব্রীজে সেখান অবস্থারত রাজাকার, রেঞ্জার ও পুলিশদের ওপর তিনদিক থেকে আক্রমণ শুরু করেন তারা। আক্রমণের মুখে কিছুক্ষণ পাল্টা উত্তর দিলেও এক সময় পিছু হটে রাজাকাররা। মাজু পুরু কংক্রিটের ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেন। নিয়ম অনুযায়ী এক্সপ্লোসিভ বসাতে বসাতে মধ্যরাত। সহযোগি মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলে ডেটোনেটর লাগিয়ে তার নিয়ে (কর্টেক্স লাইন) সরে যান ২০০ ফিট দূরে। ফিউজ ম্যাচ দিয়ে অগ্নি সংযোগ করার পর ৫ সেকেন্ডের মধ্যে আলোর ঝলকানিতে ছেয়ে যায় আকাশ। ব্রীজ ধ্বসে পরে নদীর বুকে। মুক্তিযোদ্ধাদের জয়বাংলা শ্লোগানে কেপে ওঠে আকাশ বাতাস। মাজু ভুলে যান বিষ্ফোরণে তাপে তার মুখম-ল পুড়ে কালো হয়ে গেছে।
উজ্জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাতেই আরএকটু সামনে মাঠের হাট ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। ওই ব্রীজের পাশেই সুন্দরগঞ্জের মন্ডলের হাট ছাপরহাটী রাজাকার ক্যাম্প। সেখানে বিপুল সংখ্যক রাজাকার অবস্থান করে ব্রীজ পাহারা দেয়। বিনা বাধায় নদীর পাড় দিয়ে ব্রীজের কাছে পৌছলেও রাজাকাররা সামনে ও পেছন থেকে আক্রমণ করে। তাদের মধ্যে ঠাকুগাঁওয়ের ১২জন আহতসহ ষাটজন মুলদল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে ভেসে যায় ব্রীজ ও সংলগ্ন এলাকা। গুরুতর আহত হন মাজুর ঘনিষ্ট বান্ধব অসীম সাহসী রাজা। ভোরের আলো ফোটায় মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান মন্ডলের হাট। রাজাকে কাঁধে তুলে নেন মাজু। সেখানে রাজেন বর্মন নামে এক ব্যক্তির বিশাল বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেন তারা। দিনের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই পাকিস্তানীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে তল্লাসি শুরু করে। রাজাকাররা গ্রামে ঢুকে যুদ্ধ জয়ের উৎসব করছিল। বারবার মাইকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে আহবান জানান হচ্ছিল । মাজু মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে জানান, পাকিস্তানীরা তাদের সন্ধান পেলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করা হবে। কিন্তু কোন ভাবেই জীবিত তাদের হাতে ধরা দেয়া যাবে না। সেই কারণে বাঁশঝাড়ের চারপাশে তিনি মাইন ও অন্যান্য এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে দিচ্ছেন। তারপর শুরু হয় প্রতিক্ষা। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও মাজু সকলকে অস্ত্র হাতে তৈরী থাকার আহবান জানান। তিনি শেষ গুলিটি নিজের জন্য তুলে রাখার কথা বলেন। কি এক অজ্ঞাত কারণে একেবারে কাছে এসেও ফিরে যায় পাক সেনাদের ট্রাক। সন্ধ্যার দিকে গ্রামবাসীরা তাদের জানান পাকিরা সুন্দরগঞ্জের দিতে সরে গেছে। ঠিক সেই সময় আকাশ ভেঙ্গে নামে বৃষ্টি। আহত নিস্তেজ রাজাকে কাঁধে নিয়ে বিলের গলাপানি ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা দুঘন্টা হেঁটে সরে যান নিরাপদ আশ্রয়ে।
এরপর ডিসেম্বর মাসে ব্রহ্মপুত্রের কালাসোনার চরে রঞ্জু কোম্পানীর ক্যাম্পে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। সেখান থেকে গাইবান্ধার চারপাশে প্রায় প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। ফলিয়া, হাতিয়া, অনন্তপুর, ঘুঘুমারি, নদীতে পাকিস্তানী অস্ত্র ও সৈন্যবাহী জাহাজে আক্রমনের সাথে রঞ্জু কোম্পানীর অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ওয়াশিকার মো.ইকবাল মাজু প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। পাকিস্তানী যুদ্ধবিমান ওই চরগুলোতে বোমা ফেলতো। বাংকার থেকে মাজু ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি থেকে বিমান লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তেন। মাজু জানান, গুলি, বোমার শব্দ তখন এতটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল যে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কখনও কখনও প্রকাশ্যে বালুচরে দাড়িয়েও বিমান লক্ষ্য করে গুলি করেছি। শত্রুবিমান নাক ঘোরাতেই ঝাপিয়ে বাংকারে আশ্রয় নিতাম।
তার গর্ব, যুদ্ধ করতে করতেই তিনি ও তার সহযোদ্ধারা ৭ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত করে গাইবান্ধার মাটিতে পা রাখেন। ৫ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের উপকন্ঠে ফলিয়া ব্রীজে পাকিদের সাথে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। হাতাহাতি যুদ্ধে ২১ রাজাকারকে আহত অবস্থায় বন্দি করেন। তাদের আক্রমনের মুখে হানাদার ও রাজাকাররা শহর ছেড়ে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।
অর্থবিত্ত নয়, দেশের মাটিকে ভালবেসেই তিনি একাত্তরে জীবনবাজী রেখেছিলেন। তার সন্তান মেধা, মুকুট ও উৎসও অর্থ চায় না । চায় বাবার বীরত্বের স্বীকৃতি । মাঝে মাঝে মাজুরও মনে হয়, ওদের জন্য রাষ্ট্রের দেয়া কোন বিশেষ স্বীকৃতি তিনি যদি রেখে যেতে পারতেন! তবে তিনি খুশি জাতির জনকের কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায় করেছেন। তার কামনা, রক্তে কেনা এই দেশ যেন কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে পরিচালিত না হয়।
- অমিতাভ দাশ হিমুন, সাংবাদিক ও বাচিক শিল্পী
কেআরআর/জিএআই
সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়
জেলার খবর
জনপদ |
সভা
মতবিনিময় |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
জনপদ |
সভা
মতবিনিময় সভা |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শ্রদ্ধাঞ্জলি
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস পালিত
জেলার খবর
জনপদ |
আলোচনা সভা
বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস পালিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
আলোচনা সভা
বিশ্ব মানবিক মর্যাদা দিবস |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত
জেলার খবর
জনপদ |
আলোচনা সভা
প্রতিবন্ধী দিবস |
গাইবান্ধা
পলাশবাড়ীতে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮০তম জন্মবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
রাজনীতি |
জন্মবার্ষিকী
ফজলুল হক মনি |
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে যুববলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জন্মবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
রাজনীতি |
জন্মবার্ষিকী
ফজলুল হক মনি |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে নারী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
ক্রীড়া-বিনোদন |
প্রতিযোগিতা
নারী ফুটবল |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে আলোচিত রাসেল হত্যাকাণ্ডের আসামি যুবলীগ নেতা সৈয়ব আলী গ্রেফতার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
গ্রেফতার
রাসেল হত্যা |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
পলাশবাড়ীতে সড়ক দূর্ঘটনায় রংপুর বেতার শিল্পী নিহত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনা |
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় স্বাস্থ্য বিভাগীয় সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের প্রতিবাদ সভা
জেলার খবর
জনপদ |
প্রতিবাদ সভা
সিএইচসিপি এসোসিয়েশন |
গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন আ.লীগ নেতা মকবুল হোসেন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মকবুল হোসেন |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সভা
পুষ্টি সমন্বয় কমিটি |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় পিকআপ মালিক সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
জনপদ |
মতবিনিময় সভা
পিকআপ মালিক সমিতি |
গাইবান্ধা
চলে গেলেন সুন্দরগঞ্জের প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মকবুল হোসেন |
সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
মেলা
বিজ্ঞান মেলা |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধার দারিয়াপুরে সোনালী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
উদ্বোধন
সোনালী ব্যাংক |
দারিয়াপুর, গাইবান্ধা
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সমাবেশ
মহিলা সমাবেশ |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জের সেনপাড়ায় চলছে কুমড়ো বড়া তৈরির ধুম
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
জনজীবন
কুমুড় বড়া |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জে অযত্ম অবহেলায় ভাবমূর্তির সংকটে শহীদ মিনার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শহীদ মিনার
ভাবমূর্তির সংকট |
সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
এসকেএস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
জেলার খবর
|
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
এসকেএস স্কুল এ্যান্ড কলেজ |
গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে জনতার সংলাপ অনুষ্ঠিত
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সংলাপ
জনতার সংলাপ |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা শহিদ মিনারে আলোক প্রজ্জ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জেলার খবর
জনপদ |
আলোক প্রজ্জ্বলন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান |
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় হঠাৎ বন্ধ পেট্রল পাম্প, দুর্ভোগে মানুষ
জেলার খবর
জনপদ |
দুর্ভোগ
বন্ধ পেট্রল পাম্প |
গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের চাবি হস্তান্তর
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
হস্তান্তর
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুকের মাতার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোক
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
শোকসংবাদ
মালেকা বেগম |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
গোবিন্দগঞ্জে গরুর খামারে অগ্নিকান্ড, ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্ঘটনা
অগ্নিকান্ড |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
১৭দফা দাবিতে গাইবান্ধায় সিপিবির পদযাত্রা, দেশের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রায় হামলার নিন্দা
জেলার খবর
রাজনীতি |
পদযাত্রা
সিপিবি |
গাইবান্ধা
রংপুর সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ পদক পেলেন গাইবান্ধার আবু জাফর সাবু
জেলার খবর
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি |
পুরস্কার-স্বীকৃতি
আবু জাফর সাবু |
গাইবান্ধা
যা বলা আছে এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
এমপি লিটন হত্যা মামলা |
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে ডিবি পুলিশের অভিযানে আট জুয়ারী আটক
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
আটক
জুয়ারী আটক |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
জনকল্যাণ
শীতবস্ত্র বিতরণ |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
কড়া নিরাপত্তা |
গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: ফাঁসির রায় শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসামীদের স্বজনরা
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা |
গাইবান্ধা
এমপি লিটন হত্যার রায়: আদালত প্রাঙ্গণে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়
জেলার খবর
আইন-আদালত |
রায়
উৎসুক মানুষের ভিড় |
গাইবান্ধা
ঘুষ চাওয়ার অপরাধে গোবিন্দগঞ্জে এসআই ক্লোজড
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
দুর্নীতি
এসআই ক্লোজড |
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
ফুলছড়িতে বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে অবহিতকরণ সভা
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
সভা
অবহিতকরণ সভা |
ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
সাদুল্লাপুরে শিবির নেতা গ্রেফতার
জেলার খবর
গ্রামীণ জনপদ |
গ্রেফতার
শিবির নেতা গ্রেফতার |
সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা
দু’বছর যাবৎ স্থবির গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সকল কার্যক্রম, উন্নয়ন ব্যাহত
জেলার খবর
জনপদ |
দুর্ভোগ
উন্নয়ন ব্যাহত |
গাইবান্ধা
রংপুর জেলা ও মহানগর আ'লীগে সাবেক নেতৃত্ব পুনর্বহাল
বিভাগীয় খবর
রাজনীতি |
কাউন্সিল
আওয়ামী লীগ |
রংপুর
মালিতে দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১৩ ফরাসি সেনা নিহত
আন্তর্জাতিক খবর
জনপদ |
দুর্ঘটনা
দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ |
মালি, আফ্রিকা
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
1
| 2
| 3
| 4
| 5
| ||
6
| 7
| 8
| 9
| 10
| 11
| 12
|
13
| 14
| 15
| 16
| 17
| 18
| 19
|
20
| 21
| 22
| 23
| 24
| 25
| 26
|
27
| 28
| 29
| 30
| 31
|
Crafted with by arccSoftTech & Powered with CSR by arccY2K.com a Subsidiary of BangladeshICT.com